মোল্লাহাটের উৎপত্তি ও নামকরণঃ মোল্লাহাট উপজেলার নামকরণ সম্মন্ধে বিশেষ কোন তথ্য নাই তবে এই উপজেলার নাম কেন মোল্লাহাট হইল সেই সম্মদ্ধে এলাকার মুরব্বিদের মুখে যাহা শোনা যায় তাহা হইল বর্তমানে মোল্লাহাট থানা যেখানে অবস্থিত সেখান থেকে দক্ষিণ পশ্চিম কোনের দিক মোল্লারকুল গ্রাম যেখানে প্রাইমারী বিদ্যালয়টি অবস্থিত তার নিকটবর্তী কোথাও মোল্লাহাট থানা অবস্থিত ছিল, আবার কাহারো মতে প্রাইমারী বিদ্যালটির অপর পাড়ে অর্থাৎ নালুয়া নদীর দক্ষিণপাড়ে কাহালপুর পশ্চিম পাড়ায় মোল্লা বংশের বেশ খানিক নামকাম ও প্রভাব ছিল সেখানে প্রথম মোল্লাহাট থানা ছিল। মোট কথা এদেশে বৃটিশের আগমনের পূর্বে মোল্লাহাট থানা দুই জায়গায় যে কোন স্থানে অবস্থিত ছিল। বৃটিশ আগমনের পর যখন নালুয়া নদীর স্রোত কমে গিয়েছিল তখন মধুমতি নদীর তীরে মোল্লাহাট থানাটি অবস্থান করে।
বহুযুগ আগে ভারত উপমহাদেশে বিবাহ বা নিকাহ পড়াতে মৃত ব্যক্তির সৎকার্য সমাধান কল্পে মসজিদ বা ইদগাহে নামাজের ইমামতি কাজে এবং আরো বহুবিদ মুসলিম ধর্মীয় কাজের জন্য মুসলমান সমাজে একটি পরায়ন দল বেসরকারী ভাবে সংঘবদ্ধ ছিলেন। তাহারা হযরত মুহাম্মদ(সং) এর বিধি বিধান অনুযায়ী চলতেন ও অন্যদের চলার বা মানার জন্য সৎ পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন এবং মুসলমান সমাজের উন্নতির জন্য অনেক সংস্কর মুলক কাজ করতেন। তাহা ছাড়া মসজিদ বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় একাগ্রতা প্রকাশ ও ইসলাম ধর্মীয় বহুবিদ কাজে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন। সম্ভবতঃ সেই শ্রেনী ভূক্ত দলটি যুগের গতি পেরিয়েআধুনিক কালে মোলস্না শ্রেনী ভূক্ত সম্প্রদায়ে প্রতিষ্ঠিত। বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে মোলস্নার দৌড় মসজিদ পর্যমত্ম । মোলস্না শ্রেনী ভূক্ত ব্যক্তিবর্গ যে সব সময় মসজিদকে কেন্দ্র করে মসজিদ সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকতেন, উলিস্নখিত প্রবাদ বাক্যটিই তার যথার্থ প্রমান।
সেই মোলস্না বংশের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি যার দাম্ভিকতায় এলাকার বাঘ মহিষ এক ঘাটে পানি পান করত, যার ধন ও ঐশ্বর্যে আঞ্চলিকতার প্রভাব ছিল। যার যশ ও মান অত্র এলাকার পথে প্রামত্মরে ও জনমনে গেঁথে থাকতো, যার হুংকারে সাত গ্রামের লোক ভয়ে থর থর কাঁপতো। কথিত আছে সেই প্রভাবশালী ধনবান ও দাম্ভিক ব্যক্তি হাজী মুহাম্মদ তমিজ উদ্দিন মোলস্না নামে খ্যাত। এই তমিজ উদ্দিন মোলস্নার বংশধরগণ আজও মোলস্নাহাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে। সম্ভবতঃ এই মোলস্না বংশেরনাম অনুসারেই অত্র এলাকার নাম করণ হয়েছে‘‘মোল্লাহাট’’। যা আজও কাগজে কলমে মোল্লাহাট নামটি অলিখিত শাসনতন্ত্রের মত মৌজা শুন্য হয়ে পরিচিত।
আজকের এই মোল্লাহাটের ঐতিহাসিক পটভূমি বর্ননা করতে গিয়ে অতীত ইতিহাসের দিকে ফিরে দুএকটি প্রমান্যচিত্র তুলে ধওে অতীত কাহিনীবর্নানা করে যুক্তি প্রদর্শন করা হলোঃ-
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক সম্ভবতঃ ১৮২০ সালে যশোর জেলার তদানীমত্মন কালেক্টর বাহাদুর সি,এস,ভি রোজারী লাল পাগড়ী মাথায় পড়ে হাতে ছড়ি ঘুরায়ে লঞ্চযোগে তখনকার ভরা যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে নদী দিয়ে এসে (তমিজ উদ্দিন মোলস্নার) তার ঘাটে লঞ্চ ভিড়ান। উক্ত তমিট উদ্দিন মোলস্নার বৈঠকখানায় একটি পুলিশ ফাড়ী করার সিদ্ধামত্ম নেন। তখনকার দিনে প্রতিকুল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাগেরহাট হতে ২৬ মাইল দুওে অত্র এলাকা শাসন করা কঠিন ও দুরহ ব্যাপার ছিল। সম্ভবতঃ ১৮৩২ সালে উক্ত পুলিশ ফাড়ীর গুরম্নত্ব দিনদিন বৃদ্ধি পায়। ফলে যোগাযোগ বাসস্থান ও খাদ্য সামগ্রীর অপ্রাচুর্য্য দেখা দেয়। পুলিশ ফাড়ীকে কেন্দ্র করে দোকান পাট ও পন্য সামগ্রীর কেনা বেচার কেন্দ্র গড়ে উঠে। যুগের আবর্তেউক্ত স্থানের গড়ে উঠা বহুল কেন্দ্রটি ‘মোল্লাহাট’’ নামে আখ্যায়িত হয়। ক্রমে ক্রমে উক্ত হাটে দোকান পাট ঘরবাড়ী গড়ে উঠে এবং পন্য সামগ্রীর আমদানী ও রপ্তানীর বিসত্মার লাভ করে। সেই খানে পুলিশ ফাড়িটি ও কলেবরে বৃদ্দি হয়ে দালান কোঠায় পরিণতি হয়।
নালুয়া নদীর গতি ধারা বন্দ হয়ে যাওয়ার ফলে উক্ত পুলিশ ফাড়ী ‘‘মোলস্নাহাট’’ নামক ব্যবসা কেন্দ্রটির গুরম্নত্ব কমতে থাকে যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা দেখা দেয়,পন্য দ্রব্যাদিও পরিবহন ব্যবস্থা কঠিন হয়ে পড়ে। দুর দুরামত্ম হতে আগত হাটুরেদের সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে, ফলে উক্ত পুলিশ ফাড়ী এবং সেই কথিত হাটটি স্থানামত্মরের প্রশ্ন দেখা দেয়। ওদিকে মধুমতি নামে নদীর গতিধারা উত্তাল তরঙ্গেউলস্নাসিনী বেসে পাগলা মাতঙ্গীনের মতদÿÿনা পথে ছুটতে থাকে। কালের চক্রে প্রয়োজনের তাগিদে সম্ভবতঃ ১৮৫৭ সালে উলিস্নখিত হাজী তমিজ উদ্দিন মোলস্নার উঠান হতে পুলিশ ফাড়ীতে ও হাটের দোকান পাট গুটিয়ে যৌবনা লাম্যময়ী খরস্রোতা মধুমতির চরে নতুন ভাবে নতুন হাট গড়ে ওঠে। উলেস্নখ্য যে সেই তমিজ উদ্দিন মোলস্নার বৈঠকখানার পুলিশ ফাড়ীর দালানকোঠার জরাজীর্ন ধংসাবিশেষ ও হাটের ভগ্নাংশের ইতিচিত্র এখনো কাহালপুরস্থিত মৌজায় বিদ্যমান রয়েছে এবং সেখানকার বাড়ী গুলিকে এখনো অনেকে ‘‘হাট খোলার বাড়ী’’ উলেস্নখ করেন। প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানের মোলস্নাহাট বাজার তথা গাড়ফা হাটকে ভূল করে ‘‘চরেরহাট’’ বলে আখ্যায়িত করেন। তাছাড়া বর্তমানের উপজেলা ভবন, রম্নপলী ব্যাংক, গাড়ফা প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা ‘‘চরপাড়া’’ বলে আখ্যায়িত। বর্তমানের মোল্লাহাট মধুমতির তীওে অবস্থিত। উহা যে সাবেক মধুমতির চর ছিল। উলিস্নখিত কথিত কথাতেই তার যথার্থ প্রমান পাওয়া যায়। মোল্লাহাট থানা দপ্তরের নথিপত্রানুযায়ী প্রমান পাওয়া যায় যে ১৮৬৭ সালে কাহালপুরস্থিত তমিজ উদ্দিন মোলস্নার বৈঠক খানা হতে সাবেক পুলিশ ফাড়িটি স্থানামত্মরিত হয়ে মধুমতির চরে পুলিশ ষ্টেশন নামে নতুন ভাবে রম্নপ দেয় ও স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতীতের জরাজীর্ন কংলালসার রম্নপকে অতল গহবরে ফেলে দিয়ে নবজাত শিশুর ন্যায় মধুমতির তীওে তদানীমত্মন জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জেংকে বলে এ মোল্লাহাট থানা সদর দপ্তরযা বর্তমানে মোল্লাহাট উপজেলা নামে খ্যাত। সবচেয়ে মজার কথা হল মোল্লাহাট উপজেলার মানচিত্রে মোলস্নাহাট নামের কোট মৌজা না থানা সত্বে ও মোলস্নাহাট নামের উপজেলাটি বাংলাদেশ মানচিত্র উপজেলা সদরের সারিতে স্থান দখল করে আছে। ১৯৫৯ সালের পূর্বে উপজেলা পর্য্যায়ে স্থানীয়সরকারের অসিত্মত্ব ছিলনা। ১৯৫৯ সালেই প্রথম থানা/ উপজেলা পর্যায়ে থানা কাউন্সিলগঠন করা হয়। কালের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন পূনর্গঠন অধ্যাদেশের আওতায় ০২-০৭-১৯৮৩ সালে মোল্লাহাটকে উপজেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস